ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে ৪টি সংসদীয় আসন : জয়-পরাজয়ের নিয়ামক ৩ লাখ তরুণ ভোটার

মনতোষ বেদজ্ঞ :  একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। কক্সবাজার জেলার চার সংসদীয় আসনে বিগত ১০ বছরে ভোটার বেড়েছে ভোটার ২ লাখ ৯৮ হাজার ৭৭২ জন। তাদের অধিকাংশই তরুণ এবং তারা জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবে। এটা তাদের জন্য যেমন নতুন অভিজ্ঞতা, তেমনি এই তরুণ ভোটাররাই এবারের নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের নিয়ামক হবে।

কক্সবাজার সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে তরুণ সমাজের প্রথম ভোটটি নেওয়ার জন্য সব দলের চেষ্টা থাকবে। নির্বাচনে জিততে হলে তরুণদের ভোটের ওপর নির্ভর করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। তরুণরা চায় রাজনীতির গুণগত মানের পরিবর্তন। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর এজেন্ডাও যাচাই করে নিতে চায় তারা। তাদের জন্য আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে, সে চিত্রটি তারা যেমন নিজেদের মনে এঁকে রেখেছে, তেমনি তাদের নিজস্ব পরিকল্পনাও আছে। সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটবে এবারের নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে।’

কক্সবাজার পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, কক্সবাজার সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সম্মান তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহমদ ফরহাদ বলেন, ‘তরুণরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। আমাদের চেতনায় রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ। সুস্থ গণতান্ত্রিক চর্চা, সুশাসন ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা চাই আমরা। এমন এক সরকার চাই, যারা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। জীবনের প্রথম ভোটটি আমরা এমন কাউকেই দিতে চাই।’

এ কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সদ্য বিবিএস (সম্মান) পাশ করেছেন অনিমা ভট্টাচার্য্য। নতুন ভোটার হয়েছেন তিনিও। অনিমা বলেন, ‘আমাদের ভাবা উচিত কার দিকে যাবো? উন্নয়ন ও প্রগতির পক্ষে, নাকি এর বিপরীত দিকে? আমরা সেই ইতিহাস লিখতে চাই, যেখানে মুক্ত চেতনার আগামী উজ্জ্বলতর হবে। মুক্তচিন্তা ও দেশ গড়ার কাজে লাগবে আমার প্রথম ভোট।’
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলায় ভোটার ছিলেন ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৩১০ জন। এবার ভোটার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৮২ জন। তাদের মধ্যে ৭ লাখ ৯ হাজার ৪৯৭ জন পুরুষ ও ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৫৮৫ জন নারী। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলায় ভোট হয়েছে শুধুমাত্র উখিয়া-টেকনাফ উপজেলা নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-৪ আসনে। অন্য তিন আসনে তিন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সেবার বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি।

কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে ২০০৮ সালে মোট ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৫ হাজার ৮০৫ জন। বর্তমানে এ আসনে ভোটার ২ লাখ ৯৬ হাজার ১৭৭ জন। সে হিসেবে এবার ভোটার বেড়েছে ৭০ হাজার ৩৫২ জন। ২০০৮ সালে এ আসন থেকে জামায়াতের প্রার্থী হামিদুর রহমান আযাদ জয়ী হয়েছিলেন মাত্র ১৭ হাজার ২৭ ভোটের ব্যবধানে। হামিদুর রহমান আযাদ পান এক লাখ ৩ হাজার ৯৭১ ভোট। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আওয়ামী লীগের ড. আনসারুল করিম পান ৮৬ হাজার ৯৪৪ ভোট। ২০১৪ সালে এ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আশেক উল্লাহ রফিক। এবারও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

কক্সবাজার-৩ (কক্সবাজার সদর-রামু) আসনে ২০০৮ সালে মোট ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২৩ হাজার ৮৭২ জন। বর্তমানে ভোটার রয়েছেন চার লাখ ১৪ হাজার ৯৩০ জন। সে হিসেবে বিগত ১০ বছরে এ আসনে ভোটার বেড়েছে ৯১ হাজার ৫৮ জন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে ৩৯ হাজার ৯৪২ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন বিএনপির লুৎফুর রহমান কাজল। তিনি পান এক লাখ ২৬ হাজার ৪৭৮ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাইমুম সরওয়ার কমল পান ৮৬ হাজার ৫৩৬ ভোট। ২০১৪ এ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের সাইমুম সরওয়ার কমল।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে ২০০৮ সালে মোট ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১১ হাজার ৮৫০ জন। বর্তমানে এ আসনে ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ৯০ হাজার ৮২৯ জন। সে হিসেবে এবার ভোটার বেড়েছে ৭৮ হাজার ৯৭৯ জন। অথচ ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হাসিনা আহমেদ নির্বাচিত হয়েছিলেন ৩৫ হাজার ৪০১ ভোটের ব্যবধানে। তখন হাসিনা আহমেদ পান এক লাখ ৫৬ হাজার ৫১২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আওয়ামী লীগের সালাহ উদ্দিন আহমেদ পান এক লাখ ২১ হাজার ১১ ভোট। ২০১৪ সালে এ আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ ইলিয়াছ।

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে ২০১৪ সালে মোট ভোটার ছিলেন দুই লাখ সাত হাজার ৭৮৩ ভোট। বর্তমানে ভোটার রয়েছে দুই লাখ ৬৬ হাজার ১৪৬ জন। সে হিসেবে বিগত ১০ বছরে এ আসনে ভোটার বেড়েছে ৫৮ হাজার ৩৬৩ জন। ২০০৮ সালে এ আসন থেকে ২৪ হাজার ৩১৪ ভোটের ব্যবধানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আব্দুর রহমান বদি। তিনি পেয়েছিলেন এক লাখ ৩ হাজার ৬২৬ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী পান ৭৯ হাজার ৩১০ ভোট। ২০১৪ সালে অবশ্য এ আসনে পুনরায় ধস নামানো বিজয় অর্জন করেন আব্দুর রহমান বদি। তিনি পেয়েছিলেন এক লাখ পাঁচ হাজার ৪৮৯ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী জাতীয় পার্টির তাহা ইয়াহিয়া পান মাত্র সাত হাজার ২৭৪ ভোট। বিএনপি’র মত বড় দল ওই নির্বাচনে অংশগ্রহন না করায় সেসময় আবদুর রহমান বদির এ ধরনের বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে মনে করে ভোটাররা।

পাঠকের মতামত: